অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বৈরুত এবং লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে আরও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হেজবুল্লাহকে সমর্থন যোগায় এমন একটি ব্যাংকের কয়েকটি শাখায়ও হামলা করা হয়েছে।
এর মধ্যে বৈরুতের দক্ষিণে দাহিয়েহ শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বেক্কা উপত্যকা ও লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের মতো ওই এলাকাটিও হেজবুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ করে।
তবে, এসব হামলায় কেউ হতাহত হয়েছে কী-না তা এখনো জানা যায়নি।
লেবাননের ২৫টি এলাকা, যার ১৪টিই রাজধানী বৈরুতে, সেসবএলাকায় রাতভর হামলা হতে পারে বলে সেখানকার বাসিন্দাদের ইসরায়েল আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলো।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স বলেছে, হেজবুল্লাহকে সমর্থন করে এমন ব্যাংক ও অন্য আর্থিক অবকাঠামোগুলো তাদের মূল লক্ষ্য।
রবিবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে আইডিএফ মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি সতর্ক করে বলেছেন, “হেজবুল্লাহর সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থদান করে এমন প্রতিষ্ঠানের কাছে যারা রয়েছেন, তাদের অবিলম্বে সেখান থেকে সরে যেতে হবে।”
“আগামী কয়েক ঘণ্টায় কয়েকটি টার্গেটে হামলা চালানো হবে এবং আরও কিছু জায়গায় রাতভর হামলা হবে,” বলেছেন তিনি।
“বেসামরিক প্রতিষ্ঠান, অ্যাসোসিয়েশন ও এনজিওগুলোকে ব্যবহার করে ইরান কীভাবে হেজবুল্লাহর সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থের যোগান দেয়, আসন্ন কয়েক দিনে সেটি আমরা প্রকাশ করবো,” ইসরায়েলের মুখপাত্র বলেছেন।
সর্বশেষ লেবাননের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা এনএনএ’র খবরে বলা হয়েছে, পূর্ব বেক্কা ভ্যালিসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাংক আল কার্দ আল হাসান এসোসিয়েশনের বিভিন্ন শাখায় হামলা হয়েছে।
বৈরুতের রফিক হারিরি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছেও ব্যাংকটির একটি শাখায় হামলা হয়েছে। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরণস্থল থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, লেবাননজুড়ে ওই ব্যাংকটির ৩০টির বেশী শাখা আছে। এর মধ্যে ১৫টি আছে বৈরুতের জনবহুল এলাকায়।
ইসরায়েল ওই ব্যাংকটির বিরুদ্ধে হেজবুল্লাহকে অর্থায়নের অভিযোগ এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রও বলছে হেজবুল্লাহর আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকটি ব্যবহৃত হচ্ছে।
অন্যদিকে, হেজবুল্লাহ বলছে রবিবারেও ইসরায়েলে সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালিয়েছে তারা। দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে তারা।
রবিবার সন্ধ্যায় আইডিএফ জানিয়েছে গত চব্বিশ ঘণ্টায় ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে কয়েক ডজন রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে।
তারা আরও জানিয়েছে যে বৈরুতে হেজবুল্লাহর একটি ভূগর্ভস্থ সমরাস্ত্র ওয়ার্কশপ এবং হেজবুল্লাহর গোয়েন্দা সদর দপ্তরের কমান্ড সেন্টারে গোয়েন্দা তথ্য ভিত্তিক হামলা চালিয়েছে তারা।
এসব বেসামরিক নাগরিকদের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছে তারা।
হেজবুল্লাহ ও লেবাননের কর্মকর্তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু বানানোর অভিযোগ করেছে। ইসরায়েল সে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
রবিবার লেবাননে থাকা জাতিসংঘের অন্তর্বর্তী বাহিনীর একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এবং লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মারওয়াহিনে ইসরায়েল সীমান্তে জাতিসংঘ অবস্থানের নিরাপত্তা বেড়া ধ্বংস করে দেয়ার অভিযোগ করেছে আইডিএফের বিরুদ্ধে।
“জাতিসংঘ অবস্থান অমান্য করা ও জাতিসংঘ সম্পদ ধ্বংসের মতো আন্তর্জাতিক আইন ও নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ নম্বর প্রস্তাবের নিদারুণ লঙ্ঘন,” ইউনাইটেড ন্যাশনস ইনটেরিম ফোর্স ইন লেবানন বা ইউনিফিল এক বিবৃতিতে বলেছে।
ওদিকে লেবাননের আর্মি জানিয়েছে নাবাতিয়েহ এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় তাদের তিন সেনা নিহত হয়েছে। ইসরায়েল এ দুটি ঘটনার বিষয়ে এখনো কোন মন্তব্য করেনি।
লেবাননের আর্মি ঐতিহাসিকভাবেই ইসরায়েল ও হেজবুল্লাহর মধ্যকার দ্বন্দ্ব থেকে দূরে অবস্থান করে। কিন্তু গত মাসে লড়াই জোরদার হলে ইসরায়েলি হামলায় তাদের বেশ কিছু সেনাসদস্য নিহত হয়েছে।
হেজবুল্লাহ বলেছে গাজায় হামাসের প্রতি সংহতি প্রকাশের জন্যই তারা ইসরায়েলের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা করছে।
হেজবুল্লাহ ও হামাস উভয় সংগঠনই ইরান সমর্থিত। লেবাননের কর্মকর্তারা বলছে গত বছর জুড়ে দেশটিতে প্রায় ২৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে। একই সময়ে ইজরায়েলের উত্তরাঞ্চল ও দখলীকৃত গোলান মালভূমি এলাকায় অন্তত ৫৯ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে।
Leave a Reply